স্টাফ রিপোর্টার : ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯১৪ টাকা আইনবহির্ভূতভাবে খরচের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক থাকবে কি না, এ-সংক্রান্ত মামলা চালাতে গিয়ে ২৩ দিনে শুধু আইনজীবীদের বিল দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা।

কোম্পানিটি গত ১১ মাস ধরে প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কোম্পানিটি প্রশাসকের মাধ্যমে চলবে এমন আদেশ এসেছে গত ১৬ জানুয়ারি।

আদেশে বলা হয়, ১০ জানুয়ারি চেম্বার আদালত হাইকোর্টের প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ রায়টি স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায়। আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত রায় স্থগিত রাখতে বলেছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, যেসব মামলায় ডেল্টা লাইফ কোনো পক্ষ নয়, সেসব মামলার খরচ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু প্রশাসকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিরুদ্ধে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের করা রিটে আইনজীবীদের বিল বাবদ ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা কোম্পানি তুলে নিয়েছে। এটা তুলেছে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩ দিনে।

আরও বলা হয়, গত ৬ জানুয়ারি প্রশাসককে অবৈধ ঘোষণার রায় দেয়ার পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে সিএমপি করলে ১০ জানুয়ারি শুনানি হয়। পরে প্রশাসকও একটি সিএমপি করেন। যার শুনানি না হলেও শুনানি বাবদ ১২ জানুয়ারি তুলে নেয়া হয় ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্ত করে চার মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কোম্পানির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়ে আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনার কয়েক দিন পর ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সাসপেন্ড করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা প্রশাসক নিয়োগ পেলে দুদক থেকে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। অবশ্য তার এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে কোম্পানির সাবেক পর্ষদ সদস্যরা উচ্চ আদালতে রিট করেন।

রিটের পর উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে যেসব বিষয়ে নজরদারি করার দায়িত্ব দিয়েছে তিনি যেন সেটাই করেন।

প্রশাসক নিয়োগের পর ডেল্টা লাইফে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে কোম্পানির ডিএমডি ও সিওও মঞ্জুরে মাওলা, লিগ্যাল কনসালট্যান্ট আবদুল ফাত্তাহ, কনসালট্যান্ট (লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট) মাহবুব আলম খান, সিএফও ফারহান উদ্দিন জড়িত বলে নাম আসে।

এ ছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করার পর কোম্পানিতে মাস্ক বিতরণ, সম্মেলন, শেয়ার বিক্রি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকার এফডিআর ও বাখরাবাদ (গ্রুপ কমিশন বাণিজ্য) কেলেঙ্কারি এবং আইনি খরচের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের অভিযোগ ওঠে। এর সঙ্গে দুই প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা ও রফিকুল ইসলাম জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয়।

সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে কেউ এ ধরনের অভিযোগ করতে পারেন না। কারণ এটি এখন প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে আছে। আইনি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো আমার দায়িত্ব পালন সময়ে হয়নি।’

ডেল্টা লাইফে বর্তমানে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন আইডিআরের আরেক সাবেক সদস্য (প্রশাসন) মো. কুদ্দুস খান। তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। তার আগে প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলাম।