নিজস্ব প্রতিবেদক: আরএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জনতা ব্যাংকে ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ খেলাপির দ্বায়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাকসুদুর রহমানের পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশের কপি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি শুনানি শেষে এই আদেশ জারি করেছে চট্টগ্রাম আর্থঋণ আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এই শাখায় ৩১২ কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি আরএসআরএম গ্রুপ। তবে ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত অত্যন্ত নগন্য।

মামলা দায়েরের পর বিপুল পরিমাণ খেলাপী ঋণ সম্পূর্ণ অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংক যত্নশীল ছিল না। সাড়ে তিন বছর পর বিষয়টি আদালতের নজরে এলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে সমন জারি করা হয়। একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের এ রকম নিষ্ক্রিয়তা গ্রাহকদের খেলাপীপ্রবণ করে তুলছে, যা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে আদালত।

সূত্র আরও জানায়, আদালত জানায় স্বীকৃত মতে বিবাদী (মাকসুদুর রহমান) একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপী। কারণ ২০১৯ সালে মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন অনেক খেলাপি। কিন্তু সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেননি বিবাদীগণ। মাকসুদুর রহমান মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী রয়েছে। এর আগে এই আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলার আসামি অর্থ পাচার করে দেশত্যাগ করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মাকসুদুর রহমানকে দেশত্যাগের অনুমতি দিলে ব্যাংকের অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছে আদালত।

অর্থঋণ আদালত জানায়, খেলাপী ঋণের ভারে দেশের ব্যাংকিং খাত ধুকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ছাড় দিয়েও খেলাপী ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। অত্যাধিক মামলা জটের কারণে বিচারিক প্রক্রিয়ায় খেলাপী ঋণ আদায়ের পরিমাণ হতাশাব্যঞ্জক। এই আদালতের বহু আসামি দেশত্যাগ করায় তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় শীর্ষস্থানীয় ঋণ খেলাপীদের বিদেশ গমনের অধিকার, বিচারিক সিদ্ধান্তের অধীনে থাকা ন্যায় সঙ্গত। তাই গত বছরের ১৭ নভেম্বর আসামির করা দরখাস্ত এবং আপত্তি নাকচ করা হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের আট দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মানে চলতি বছরের ৯ মাসের হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি মাত্র কয়েকটি শিল্প গ্রুপের কাছে। এর মধ্যে থার্মেক্স, ক্রিসেন্ট, এননটেক্স ও আরএসআরএম গ্রুপের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা দরকার। মাত্র চারটি গ্রুপের ঋণ নিয়মিত হলে জনতা ব্যাংকের কোনো পিছুটান থাকবে না।