স্টাফ রিপোর্টার : ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে প্রশাসক তুলে নেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যৌথভাবে কোম্পানিটির জন্য নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করবে।
সচিবালয়ে বুধবার, ৫ জানুয়ারি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার করবে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ এবং ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোও প্রত্যাহার করবে আইডিআরএ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান) মঞ্জুরুর রহমান, তাঁর ছেলে ডেল্টা লাইফের সাবেক পরিচালক জেয়াদ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে গত রাতে সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি শুধু জানান, তিনি অসুস্থ বলে এ নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। তবে বৈঠক হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত পরিচালনা পর্ষদ নেই। বিমা খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটি ১১ মাস ধরে চলছে প্রশাসকের নেতৃত্বে। এখন পর্যন্ত চার মাস করে তিনজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন। একের পর এক প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে আইডিআরএ।
ডেল্টা লাইফে প্রথম প্রশাসক বসানো হয় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। আইডিআরের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রথম প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর চার মাস পর দ্বিতীয় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে।
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তৃতীয় প্রশাসক নিয়োগ পেয়েছেন বিমা খাতের বাইরের ব্যক্তি আইডিআরের আরেক সাবেক সদস্য (প্রশাসন) মো. কুদ্দুস খান। ডেল্টা লাইফের জীবন তহবিল রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় আড়াই হাজার।
আইডিআরএ ও ডেল্টা লাইফ সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করা হয়েছে আইডিআরএ ও এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে মামলা আছে ২১টি। আর আইডিআরএর পক্ষ থেকে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে চারটি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মোট ২৫ মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবে দুই পক্ষই।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রশাসক দিয়েও আর কোম্পানিটিকে পরিচালনা করা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিএসইসি যৌথভাবে একটি পরিচালনা পর্ষদ ঠিক করবে। ওই পর্ষদের পরিচালনায় ও নতুন ব্যবস্থাপনায় কোম্পানি চলবে। তবে ডেল্টা লাইফের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান নতুন করে কোম্পানিটিতে সিইও হিসেবে আসতে পারবেন না।
এক সময় এমনও ছিল যে বাবা মঞ্জুরুর রহমান চেয়ারম্যান ও মেয়ে আদিবা রহমান সিইও ছিলেন ডেল্টা লাইফে। আর্থিক খাতের কোনো কোম্পানিতে এমন ঘটনা বিরল। ২০১৮ সালের অক্টোবরে হঠাৎ এ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালকের পাশাপাশি চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োগ পান সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) এম নূর উদ্দিন খান। সিইও হিসেবে আদিবা রহমান তখনো থেকে যান।
সূত্রগুলো জানায়, একই পদে নিয়োগ পেতে আইডিআরএর কাছে আদিবা রহমান আবেদন করেছিলেন ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। কিন্তু একই বছরের ১৬ নভেম্বর আইডিআরএ তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করে। রাজস্ব ফাঁকি ও আর্থিক অনিয়ম, বিমা পলিসি গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারের লিখিত অভিযোগ, সিইও হওয়ার জন্য অসত্য তথ্য উল্লেখসহ নানা অভিযোগে আদিবা রহমানের আবেদন নামঞ্জুর করে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ চাওয়ার অভিযোগ করা হয়। এক সপ্তাহ পর দুদকে আরেক আবেদনে বলা হয়, অভিযোগটি অসত্য।
সর্বশেষ গত মাসে ডেল্টা লাইফের স্থগিত পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৭৪ পৃষ্ঠার চিঠি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনে আইডিআরএ।
এদিকে প্রশাসকের পরিবর্তে নিয়মিত পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালিত হওয়া ভালো বলে মনে করেন ডেল্টা লাইফের সাবেক সিইও আদিবা রহমান।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এবং আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে দুজনই এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।